বিনিয়োগের ভিত্তি . Investment Basics

বেশিরভাগ মানুষ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভুল করে থাকে। আর ব্যাংকও সেটা জানে। মিউচুয়াল ফান্ডের বিক্রয় কর্মীরা এর উপরেই নির্ভর করে আছে। ইনস্যুরেন্সের ফেরিওয়ালারাও। আর সেইসাথে ঝুঁকির কারবার যাদের,জানে তারাও। দুটি কমন ভুলের যেকোনো একটি আমরা করেই থাকি, লোভী হয়ে অতিরিক্ত ঝুঁকি নিই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, অথবা ভয় পেয়ে স্থবির জিআইসি গুলোতে টাকা আটকে রাখি। দুইভাবেই, আমাদের ক্ষতিই হয়।

বেশিরভাগ মানুষ এ নিয়ে বেশি চিন্তাভাবনা করে না, তাঁরা রিয়েল এস্টেট কিনে রাখে। একই রাস্তার একধারে তাদের অর্জিত সম্পত্তির প্রায় সবটুকু রাখা থাকে যার উপর থাকেনা তেমন কোনও নিয়ন্ত্রণ। যেমনটি টরেন্টোর বিচ এরিয়ার একটি সেমির ৭০ বছর বয়সী দম্পতির বেলায় দেখুন, মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি পড়ে আছে কিন্তু ততক্ষন তাঁদের কোনও লাভ হচ্ছে না যতক্ষণ অর্ধেক অংশের সম্পত্তি গ্যারেজ আর পোকামাকড় ভরা লনসহ আর কারো কাছে বেঁচে না দেয়া হচ্ছে।

আমরা মনে হয় রিয়েল এস্টেট নিয়ে বেশি ভাবছি। যাই হোক, টাকা বাড়ানো নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যাক। এটা নিয়ে আমি বিস্তারিত কাজ করব পরবর্তী সময়ে, এখনকার মত দশটা নিয়মের কথা উল্লেখ করে শুরু করছি আলোচনা।

বিনিয়োগ করুন, কিন্তু তা যেন জুয়ায় পরিণত না হয়ঃ মোটামুটিভাবে এরমানে দাঁড়ায় এমন, মোটা টাকা না থাকলে(ধরুন, ৭ অঙ্কের!?)ব্যাক্তিগত স্টক কিনবেন না। স্টক মার্কেট অস্থির একটা জায়গা,অস্থিতিশীল। কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের মিথ্যে বলে, যদিও কাগজে কলমে দাবি করা হয় যে তারা তা বলে না। একদিনে দাম এমন উঠানামা করতে পারে যা এক বছরের ডিভিডেন্ডের হিসাবকে প্রভাবিত করতে পারে। অপ্রচলিত,আকস্মিক ক্ষেত্রগুলো যেমন, এনার্জি সেক্টর,বিনিয়োগকারীদের জন্য মরণ ফাঁদ হতে পারে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা প্রফেশনাল ব্যবসাদার ও উঁচু ফ্রিকোয়েন্সির কম্পিউটারে করা লেনদেনের সাথে পেড়ে উঠবেন না। জুয়ো খেলতে চাইলে লটারির টিকিট কিনুন না হয় ৪০১ এর দ্বারস্থ হওন।

বৈচিত্র্য আনুনঃ স্টক মার্কেটে আত্মপ্রকাশ করাই যেতে পারে, কিন্তু তা হতে হবে প্রচুর ইকুইটির মাধ্যমে। ইটিএফ অর্থাৎ এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডস এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযোগী। এগুলো মিউচুয়াল ফান্ডের মতই কিন্তু এগুলোর ক্ষেত্রে বিশাল ম্যানেজমেন্ট ফি নেই।এরাও মার্কেটে ট্রেড চালু রাখে, অর্থাৎ তারল্য আছে, কিন্তু তারপরও ডিভিডেন্ডের উপরই নির্ভর করে। আপনি একটি মাত্র ইটিএফ দিয়ে ইউএসএ বা কানাডার সব স্বনামধন্য কোম্পানির স্টক কিনতে পারবেন।

স্বদেশপ্রেমী হওয়ার দরকার নাইঃ ঝুঁকি এড়াতে আর নির্দিষ্ট আয় নিশ্চিত করতে বৈচিত্র্য আনার আরেকটা অর্থ হল খুব বেশি ম্যাপল এসেটের মালিক না হওয়া। কানাডা বিশ্বের ফিনান্সিয়াল মার্কেটের চার শতাংশের ধারক, যেখানে ৭০ শতাংশ বিনিয়োগকারীর সম্পদ কেবলই কানাডীয় সম্পত্তি। মোটেই উচিৎ নয় এমনটি হওয়া। টরেন্টো মার্কেট ৫ শতাংশ বেশি যাচ্ছে যেখানে S&P 500 ২০ শতাংশ, ইউরোপ ১৪ শতাংশ আর জাপানের স্টক মার্কেটে ৪৪ শতাংশ বেশি হয়েছে স্টকের মূল্য। যে কারণে কানাডীয় স্টকের অবস্থা এখন খুব একটা সুবিধাজনক চেহারায় নেই।

ভারসাম্য ঠিক রাখুনঃ সফলতার জন্য বিনিয়োগের মূলমন্ত্র হল বিভিন্ন খাতে সম্পদ বিন্যাস্ত রাখা,আর সেটি সামঞ্জস্য ও ভারসাম্য রেখেই। সবার জন্য সব সূত্র খাটে না তবে মোটামুটি ভাবে ৪০ শতাংশ ফিক্সড ইনকাম আর ৬০ শতাংশ গ্রোথ- এই অনুপাতটি মার্কেট আর দুর্যোগে পরীক্ষিত উপাত্ত। এই পোর্টফলিও অনুসরণ করে গড়ে ৭ শতাংশ রিটার্ন এসেছে এমনকি ২০০৮ ০৯ সালের দুঃসময়েও। এক্ষেত্রে কর্পোরেট, সরকারী, রিয়েল রিটার্ন বন্ড এগুলো সেফ স্টাফের সাথে সম্পর্কিত যেখানে গ্রোথ সাইড কানাডার ও ইউএসএর ও আন্তর্জাতিক সম্পত্তির আরএটিএস, ইটিএফ ইত্যাদি ও কম্পিটিশন ইটিএফ, ট্যাকটিকাল ফান্ড ইত্যাদি অন্যান্য সম্পত্তির সাথে সম্পর্কিত।

শুধু ভারসাম্য নয়, ভারসাম্যের পুনর্বিন্যাস জরুরীঃ নতুন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই জিনিসটা কম দেখা যায়।যেহেতু সকল সম্পত্তির মূল্যমান প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে, তাই ব্যাল্যান্সড পোর্টফলিওতে দ্রুত বড় ধরনের গড়মিল হচ্ছে। এই বছর আমেরিকান স্টকের বাজার ভাল যাচ্ছে তাই ১৭ শতাংশের ধার্যকৃত পোর্টফলিওকে ২১ শতাংশে পুনরায় ধার্য করা হল।অর্থাৎ ভারসাম্যের পুনর্বিন্যাসহল। লভ্যাংশ সঞ্চয় করে অনগ্রসর সম্পত্তির খাতে পুনঃব্যবহার করা উচিৎ। হয়ত এটাকে প্রাথমিক দৃষ্টিতে সংশয়ের সাথে দেখা হতে পারে, কিন্তু এটি বেশিরভাগ সময়ই ফলপ্রসূ হয়ে থাকে।

দামের পেছনে ছুটবেন নাঃ. আমরা হুজুগে মেতে ঝোঁকের মাথায় সিদ্ধান্ত নিই, লোকের দেখাদেখি। কোনও শেয়ারের আকাশছোঁয়া দাম দেখে সেটির উপরই বিনিয়োগ করে ফেলি, আর আমাদের পোর্টফলিওর যে অংশটা সবল অর্থাৎ লাভবান, সেটির উপরেই বিনিয়োগ করি দুর্বল অংশটাকে উপেক্ষা করে। এটি খুব বড় ধরনের ভুল। সামনের পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে, আর আমরা পুরোপুরি বেকায়দায় পড়ে যেতে পারি এই প্রবণতার জন্য।

খুব কম দামে বেচবেন নাঃ এটা এমন সহজ একটি বিষয়, অনেকে ভাববেন এটি নিয়ে কেন আমি কথা বলছি, এতো জানাই আছে যে কম দামে জিনিস বেচা উচিৎ নয়! কিন্তু অহেতুক শঙ্কার প্রভাবে বহু লোকের জন্য এই জিনিসটা মেনে চলা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যেমন ধরা যাক কেউ ৫.২ শতাংশ ডিভিডেন্ডে কোনও স্বনামধন্য ব্যাঙ্কের শেয়ার কিনল। কিন্তু সহসা দাম কমতে শুরু করার প্রবণতায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। অর্থাৎ বাস্তব আশঙ্কার প্রেক্ষিতে তারা অহেতুক বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ল। যদিও পরে মূল্য আবারো বাড়া শুরু হয়েছে।তারা শেয়ারগুলো রাখলে ৫.২ হারে ডিভিডেন্ড এবং ডিভিডেন্ড ট্যাক্স ক্রেডিট পেত। বিক্রিই শেষ কথা নয়। ২০০৯ সালে এমনটি হয়েছিল। তখন বেচে দেয়ার ঢল নেমেছিল মানুষের মধ্যে।

তারল্য থাকতে হবেঃ সব সম্পত্তি রিয়েল এস্টেটে আটকে রাখবেন না। পাঁচবছর মেয়াদি ননরিডিমেবল জিআইসি কিনবেন না। ব্যাঙ্কের তৈরি বা কাঠামো তৈরি করা কোনও পণ্যের ফাঁদে পরবেন না যা আপনাকে বছরের পর বছর আটকে রাখবে। বিভিন্ন রেট হয় এমন সেলস চার্জ সম্পন্ন মিউচুয়ালের খপ্পরে আটকে থাকবেন না, যা আপনার টাকাকে স্থবির করে ফেলে রাখবে।

টিএফএসএ এর মাধ্যমে শুরু করুনঃ টিএফএসের টাকা সেভিং একাউন্ট, জিআইসি বা বন্ড হিসেবে আটকে রাখবেন না। আপনার পোর্টফলিওর অধিক অস্থিতিশীল ও দ্রুত বর্ধনশীল অংশ এটিই। বন্ড আরআরএসপিতে রূপান্তরের সুযোগ থাকে,যেখানে ডিভিডেন্ডে রূপান্তরযোগ্য অংশ অনিবন্ধিত একাউন্টের অধীনে থাকতে পারে।

ফিএর দিকে লক্ষ্য রাখুনঃ এটি আপনাকে শেষ করে দিতে পারে। সবচেয়ে খারাপ হল মিউচুয়াল ফান্ডের উপর ধার্যকৃত এমইআর বিশেষ করে ইকুইটি ফান্ডের ক্ষেত্রে। তাই ইটিএফ ব্যবহার করে এসব ক্রয় থেকে সাবধান থাকুন। যদি আপনার উপদ্রেস্টা থেকে থাকে(১ লক্ষ ডলারের বেশি বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে থাকা উচিৎ)তাহলে এমন ব্যাক্তির খপ্পরে পরবেন না যে কমিশন নিচ্ছে আপনার কাছ থেকে কিন্তু মুখে বলছে তার সার্ভিস ফ্রিতে দিচ্ছে। এমনটা হয় না। আফটার ট্যাক্স রিটার্নের পর সেটা টের পাবেন। বরং একজনকে ১ শতাংশ বা আরও কম খরচে নিয়োগ করুন যা ট্যাক্স থেকেই কাটা হবে।

আর শেষ কথা, ঈশ্বরের দোহাই, কোনও ব্লগ থেকে উপদেশ নেবেন না।

Permanent link to this article: http://bangla.sitestree.com/%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a7%8b%e0%a6%97%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf/

Leave a Reply