‘রিমোট’ প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কি আসলে ফলপ্রসূঃ Is Remote Project Management any Effective

‘রিমোট’ প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কি আসলে ফলপ্রসূ

‘রিমোট’ প্রকল্প ব্যবস্থাপনা গতানুগতিক প্রকল্প ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপক,সংস্থা ও টিমের সদস্যদের জন্য একটি সুন্দর বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে, কিন্তু এটি কী বাস্তব সম্মত হবে? এই রিমোট’ প্রকল্প ব্যবস্থাপনার কিছু প্রায়োগিক সুবিধা আছে, কিন্তু এটি দুর্বল চিত্তের ব্যবস্থাপকের জন্য নয়।

‘রিমোট’ প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কি বাস্তবে কাজ করে? সাধারণভাবে উত্তর হল, হ্যাঁ। কিন্তু কোনও শীর্ষায়িত ভার্চুয়াল প্রজেক্ট টিমের জন্য ‘রিমোট’ প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কাজ করে? এর উত্তর হল, সবক্ষেত্রে এর কাজ করার দরকার নেই।

ভার্চুয়াল প্রজেক্ট টিমের জন্য ‘রিমোট’ প্রকল্প ব্যবস্থাপনা স্থাপনের কিছু সুবিধা আছে। এর কয়েকটি হল,

  • প্রযুক্তির প্রসারের ফলে প্রকল্পের দূরত্বগত ব্যায় হ্রাস
  • প্রকল্পের সদস্যদের জীবন ও কর্মের ভারসাম্য লাভ
  • সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ভ্রমণজনিত সময় হ্রাস
  • শীর্ষ মেধাকে আকৃষ্ট করার সম্ভবনা বৃদ্ধি।

এগুলো নিশ্চিতভাবেই সুবিধা, আপনার কোম্পানির জন্য ‘রিমোট’ প্রকল্প ব্যবস্থাপনা উপযোগী হলে কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। নিচে এরকম কিছু সম্ভাব্য বিষয় ও তার সমাধান দেয়া হল, যা ভার্চুয়াল প্রজেক্ট টিম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে।
‘রিমোট’ প্রকল্প ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে এমন কিছু বিষয়ঃ

উৎপাদনশীলতার নিম্নমুখিতা

একদম নিবেদিতপ্রাণ প্রকল্প ব্যাবস্থাপক বা দলের জন্যও মূল উদ্দেশ্য থেকে সাময়িকভাবে বিচ্যুত হওয়া অস্বাভাবিক বা অসম্ভব না, এরকম হয়েই থাকে।যদিও এক্ষেত্রে তাদের আনুগত্যের কোনও অভাব নেই ।

সম্ভাব্য সমাধান

  • ভার্চুয়াল প্রজেক্ট টিমের জন্য এমন সদস্য বাছাই করা যারা কেবল টেকনিক্যালভাবে দক্ষই নন বরং কাজটাকে উদ্যোক্তার দৃষ্টিভঙ্গি ও দায়িত্ব নিয়ে দেখবেন। উদ্যোক্তার দৃষ্টিভঙ্গি আছে এমন লোক স্বাভাবিকভাবেই তারা যে কাজ করছেন তার প্রতি টান অনুভব করবেন,ভাল ফলাফলের জন্যই কাজ করবেন,তারা উদ্যমী,স্বনির্ভর,স্বপ্রনোদিত,আর অতিমাত্রায় অভিযোজ্য।
  • টিমের সব সদস্যদের কাছ থেকে উঁচু মানের পেশাগত দক্ষতা আর আত্মনিবেদন আশা করা। এটি পুরো প্রকল্প জুড়ে সদস্যদের মধ্যে প্রণোদনার সঞ্চার করবে।
  • টিমের সব সদস্যদের মধ্যে প্রচুর সাংগঠনিক দক্ষতা থাকতে হবে। কারো মধ্যে এটি আগে থেকে না থাকলে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এবিষয়টি উন্নত করা যেতে পারে।
  • সব সদস্যের কাছে নিয়মাবলী, কাজের পর্যায় খুঁটিনাটি ইত্যাদি তুলে ধরতে হবে আর শিডিউল তৈরি করে দিতে হবে,কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণও করতে হবে যাতে কোনও কিছু বাদ পরে না যায়। এটি বিশেষ করে ভার্চুয়াল প্রজেক্ট টিমের জন্য বেশি প্রযোজ্য কারণ দূরত্ব ও সময় সংক্রান্ত বাঁধা, ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত তারতম্য ইত্যাদি অসুবিধে এই ক্ষেত্রেই বেশি চোখে পরে।

 

স্থান, দূরত্ব ও সময় অঞ্চল সংক্রান্ত বিষয়াদি

প্রকল্প পরিকল্পনা টালমাটাল হয়ে উঠতে পারে দূরত্ব ও সময় সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য, সমস্যাসঙ্কুল কর্মঘণ্টা ও রিমোট অবস্থানের জন্যও, যেখানে টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিসিং প্রভৃতির অব্যবস্থাপনার জন্যও যোগাযোগ বিঘ্নিত হতে পারে।

সম্ভাব্য সমাধান

  • নির্দিষ্ট পলিসি ও প্রটোকল তৈরি করতে হবে যাতে প্রকল্পের পুরো সময়টা জুড়ে টিম সদস্যদের সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়।যখনই সম্ভব হয় টিমের মীটিং ডেকে সব কার্যকরী সদস্যদের সাথে কথা বলে প্রকল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। টাইম জোন পরিবর্তনশীল, এটি সপ্তাহের বিচারে একটি ক্ষুদ্র সময়ের ব্যবধান হলেও মনিটরিং প্রসেসে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
  • বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করা সদস্যরা যেন তাদের জন্য নির্ধারিত কাজ শেষ করতে পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত সাহায্য পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে,আর সেই সাথে প্রয়োজনে প্রকল্প ব্যবস্থাপক যেমন যোগাযোগের ক্ষেত্রে সুবিধা পান সেই সুবিধা ক্ষেত্রবিশেষে তাদেরও দিতে হবে।

 

সংস্কৃতিগত ও আইনগত ব্যবধান

বর্তমান সময়ের বৈশ্বিক বাণিজ্যের জগতে অনেক সংস্থাই এমন প্রকল্প নিয়ে কাজ করে যেগুলোতে বিভিন্ন ভৌগলিক অবস্থান সাপেক্ষে কাজ করতে হয়। এতে অনেক সময় সংস্কৃতিগত ও আইনগত বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও কাজ করতে হয় প্রকল্পের সাফল্যের জন্য।

সম্ভাব্য সমাধান

  • প্রাথমিক পর্যায়ে অনুধাবন করতে হবে কোনও আইনগত বা নিয়মতান্ত্রিক সমস্যা সাম্প্রতিক সময়ে বা নিকট ভবিষ্যতে উদ্ভূত হতে পারে কিনা। এধরণের সমস্যাগুলো সহজেই অপ্রয়োজনীয় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক দক্ষতাসম্পন্ন আইনগত পরামর্শকের সংশ্লিষ্টতায় এধরণের সমস্যা এড়াতে প্রস্তুত থাকতে হবে যেন অনাকাঙ্খিত আর্থিক জটিলতা এড়িয়ে চলা সম্ভব হয়।
  • প্রকল্প শুরু করার প্রাক্কালে সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বাঁধা দূর করতে গবেষণা করতে হবে যেন প্রকল্পের সময়সীমার মধ্যে কোনও সমস্যা না হয়। এটি এমন একটি বিষয় যেটিকে প্রায়ই উপেক্ষা করা হয় কিন্তু শুধুমাত্র একারণেই প্রকল্প অনেকসময় ভুল বোঝাবোঝির কারণে এমনকি ভেস্তে যেতেও পারে।

 

যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতা

‘রিমোট’ প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ এই পদ্ধতিতে কাজ করার সময় সদস্যরা মুখোমুখি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে না। মুখের প্রকাশ ভঙ্গি, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ও অন্যান্য প্রকাশভঙ্গি অনুপস্থিত থাকায় যোগাযোগের স্বতঃস্ফূর্ততা কমে যায় স্বাভাবিকভাবেই। ‘রিমোট’ প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় তাই সময়মত ও সার্থকভাবে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটে।

সম্ভাব্য সমাধান

  • প্রকল্প ব্যাবস্থপককে সদস্যদের আস্থা অর্জনের জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে যেন সদস্যরা নিজেদের একাত্মতার সাথে দেখতে পায়, নিজেদের মধ্যেকার সমন্বয়কে অনুভব করে। এক্ষেত্রে এমন আরও কিছু ‘রিমোট’ প্রকল্প ব্যবস্থাপনা টিমের পরামর্শ নেয়া অর্থাৎ অন্তত কথা বলে দেখা যেতে পারে যারা পূর্বে এভাবে কাজ করে সফল হয়েছে। নিখুঁতভাবে সমন্বিত টিম গঠনের স্বার্থে সদস্যদের আরও ভাল করে চেনার চেষ্টাও করা উচিৎ।
  • যখনই সম্ভব প্রারম্ভিক সূচনার আয়োজন ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাপ্তাহিক ও দ্বি-সাপ্তাহিক মীটিঙের আয়োজন করা যেখানে সদস্যরা নিজেদের দেখতে পারে যেন এর মাধ্যমে তারা আরও নিজেদের আরও সমন্বিত অনুভব করতে পারে।
  • সময়ের সাপেক্ষে বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করতে হতে পারে, তথ্যের প্রকার, সময় ভিত্তিক প্রকরণ, তথ্যের স্পর্শকাতরতা এমনকি শ্রোতার প্রকারের উপর ভিত্তি করে।
  • দলগত পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা যা দলগত নৈপুণ্যের জন্য উৎসাহিত করবে, শুধু ব্যাক্তিগত সাফল্যের মানদণ্ড হবে না।

 

প্রযুক্তি, তথ্য সরবরাহ ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত

শিডিউল ও বাজেট অনুযায়ী প্রকল্প সম্পন্ন হওয়াটা সদস্যদের সঠিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি প্রাপ্তির উপরও নির্ভর করে। এটি বিশেষ করে ‘রিমোট’ প্রকল্প ব্যবস্থাপনার জন্য প্রযোজ্য। সময়মত কোনও সদস্য কোনও তথ্য না পেলে তা প্রকল্পের অগ্রযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যহত করতে পারে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনও ক্রুটি থাকলে তা প্রকল্পের তথ্যাবলি ও গ্রাহকের স্বার্থকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। এগুলো এমন কিছু বিষয় যাকে প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়।

সম্ভাব্য সমাধান

  • প্রকল্প সম্পাদনার পূর্বে উপযুক্ত প্রকল্প ব্যাবস্থাপক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়াদি সমন্বয় করে সকল সদস্যদের জন্য প্রবেশাধিকার সমন্বয়, নিরাপত্তা বলয় গুলো পরীক্ষা করে গ্রহণ করা ইত্যাদি,
  • কোম্পানির সকল তথ্য, রিসোর্স, প্রযুক্তি ও মোবাইল যন্ত্রাংশাদি নিরাপত্তা প্রটোকলের আওতায় আনা।

‘রিমোট’ প্রকল্প ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাজ করার ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় ভার্চুয়াল প্রকল্প টিমের সাফল্যের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে, যার মধ্যে আছে কারখানা, প্রকল্পের ধরণ, জটিলতার মাত্রা, অবকাঠামো, যোগাযোগ, প্রযুক্তি, টিমের গতিশীলতা ইত্যাদি।

সংস্থার উদ্দেশ্য ও রিসোর্সের দিকে গভীরভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। সাফল্য নির্ভর করবে প্রারম্ভিক পর্যায়ে কতটা নিখুঁতভাবে আর উপযুক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করে তথ্য, রিসোর্স আর অন্যান্য সবকিছু ব্যবহার করা হয়েছে সব ক্রুটি বিচ্যুতি এড়িয়ে। এক্ষেত্রে কিছু বিশেষায়িত টিম ট্রেনিং জাতীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা যেতে পারে শিডিউল ব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতি ব্যবহার, যোগাযোগ প্রক্রিয়া ও প্রটোকল ব্যবহারের ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য।

Permanent link to this article: http://bangla.sitestree.com/%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%ae%e0%a7%8b%e0%a6%9f-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%95%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa-%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%ac%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a5%e0%a6%be/

Leave a Reply