মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনাঃ Stress Management for Professionals

রিদওয়ান বিন শামীম

 

কর্মজীবনে সফলতা যখন আসে, তখন প্রতি ধাপে পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধির সাথে সাথে অনেক গুন বেশি বাড়ে দায়িত্ব, যা ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনে অনেক চাপের সৃষ্টি করতে পারে। চাপ মুক্তির কোন গাণিতিক সূত্র নেই বা মোটা কোন বই পড়েও এই চাপ এড়ানো শেখা সম্ভব না, তবে একটি উপায়ের কথা বলতে পারি, অকপট যোগাযোগ ও শেয়ারিঙের মাধ্যমে কিছু কিছু চাপ থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব।

চাপের প্রধান কারণগুলো শনাক্ত করা যাক

আপনি যদি একজন সফটওয়ার সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী হন, আপনি জেনে থাকবেন কীভাবে ক্রুটি সরিয়ে(debug) কোন সমস্যা সমাধান করা যায়। চাপও তেমনি একধরণের সমস্যা যার ক্রুটি সরিয়ে সমাধান করতে হবে। বের করতে হবে কেন এটি আপনার সামনে এসেছে এবং এর মূল কারণ কী? দৈনন্দিন জীবনে চাপের কারণ হতে পারে এমন কয়েকটি সম্ভবনা নিয়ে আলোচনা করা যাক,

  • কাজের চাপ এত বেশি যে ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না
  • কোন একটি এসাইনমেন্ট আপনাকে দেয়া হয়েছে, সেটি জমা দেবার সময় প্রায় শেষ কিন্তু কাজ অনেকটাই রয়ে গেছে
  • আপনার কাজের মধ্যে কোনটি করতে হবে আর কীভাবে, সেটি বুঝতে পারছেন না
  • আপনি একটি কোডের কাজ করেছেন, সেটি কোনোভাবে ডিলিট হয়ে গেছে, বা চূড়ান্ত মুহূর্তে ঠিকমত কাজ করছে না
  • আপনি একটি টিমের লিডার, টিমের সফলতা তেমন ভাল নয়, আর সেকারণে উৎপাদনে বিলম্ব হচ্ছে
  • উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট সময় আছে কিন্তু আপনি এরই মাঝে কোথাও ভ্রমনের চিন্তা করছেন, সেজন্য উৎপাদনে দেরি হতে পারে বলে ভাবছেন

যোগাযোগ, যোগাযোগ এবং... শুধুই যোগাযোগ

পেশাগত দক্ষতায় সমাধান করতে পারলে কোন সমস্যাই আসলে সমস্যা থাকে না। উপরের যেকোন সমস্যা, ধরা যাক প্রথম সমস্যাটিই, আপনি কাজের চাপ সামলিয়ে অফিস আওয়ারে সব কাজ শেষ করতে পারছেন না।

আপনার ম্যানেজারের সাথে ছোট একটি মীটিং করতে পারেন,তাঁর সামনে সব বিষয় তুলে ধরতে পারেন, আপনার বর্তমান এসাইনমেন্ট, কাজের যে জায়গাটা বেশি সংকীর্ণ বা কেন আপনি বেশি চাপ অনুভব করছেন এসব খুলে বলতে পারেন। আপনি আরেকটু সময় বা অল্প রিসোর্স তাঁর কাছে চাইতে পারেন। অবশ্যই আপনার ম্যানেজার শুনবেন ও বোঝার চেষ্টা করবেন, যদি তিনি আপনার কাছ থেকে ভাল কাজ আশা করে থাকেন। আপনাকে একটু প্ল্যান করে নিতে হবে কীভাবে আপনি আপনার বসকে কনভিন্স করবেন, আপনার কথা তাঁকে বিশ্বাস করাতে পারবেন।

উপরের যেকোনো সমস্যা একইভাবেই সমাধান করা সম্ভব, ম্যানেজারের সাথে কথা বলে। যদি সেটি সম্ভব নাও হয় তবে একটি উপায় হল, অনেক সংস্থাই তাদের কর্মীদের জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে এজাতীয় সমস্যায় আলোচনা করার সুবিধা রেখে থাকে। অর্থাৎ ম্যানেজারের সাথে কথা বলে সমাধান না হলে উপরের লেভেলে কথা বলে দেখা যেতে পারে। তবে এটি অত্যন্ত সতর্কতার দাবিদার একটি বিষয় কারণ কোন ম্যানেজারই তাঁকে অতিক্রম করে কর্মীর উপরের লেভেলে কথা বলাটাকে ভাল চোখে দেখবেন না। তবু কোন সমাধান না পাওয়া গেলে সেটি শেষ চেষ্টা হিসেবে মাথায় রাখা যায়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল গুরুত্ব অনুসারে কাজ সাজানোতে দুর্বলতা। এসমস্যা থাকলে ম্যানেজারের সাথে কথা বলে উপযুক্ত ক্রমানুসারে কাজগুলোকে সাজিয়ে চাপ কমাতে চেষ্টা করা উচিৎ। অফিস আওয়ারের পরে বা উইকএন্ডের সময় কিছু সময় দেয়ার চেষ্টাও করা যেতে পারে।

ব্যক্তিজীবন বনাম কর্মজীবন

ব্যক্তিগত কারণে কর্মক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করুন। ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানে পরিবার সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারবে। ব্যক্তিগত সমস্যা পরিবারের সদস্য বা ঘনিষ্ঠজন, স্বামী বা স্ত্রী এঁদের সাথে আলাপ আলোচনা করে সমাধান করা যেতে পারে। সমাধানের চেষ্টা ব্যর্থ হলে ম্যানেজারের সাথে কথা বলে কিছুদিনের জন্য কাজ থেকে ছুটি নিয়ে ব্যক্তিগত বা ব্যক্তিগত সমস্যা মিটিয়ে পরে আবার কাজে যোগ দিতে পারেন।

চাপ স্বল্পকালীন হতে পারে

কাজের চাপ একটু বেশি হলে বা সময়সীমা একটু অতিক্রম করলেই চিন্তিত হতে হবে এমনটি ঠিক না, এগুলোকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ ধরেই এগুতে হবে। একটু বেশি সময় দিয়ে, কারো কাছ থেকে কাজের ব্যপারে একটু সাহায্য নিয়ে বা ম্যানেজারের একটু কথা শুনার জন্য রেডি থাকলেই চাপ এড়িয়ে চলা সম্ভব।

সমস্যা যেন ফিরে ফিরে না আসে অথবা আমরা যেন বারবার একই সমস্যায় না পরি, যদি এমন হয়ই, তাহলে অবশ্যই সমাধান খুঁজে বের করাটা জরুরী হয়ে দাঁড়াবে।

নিচের কোনও পদ্ধতি আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা তা দেখুন

  • স্বল্প ব্যায়াম
  • বিভিন্ন মাত্রার যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন
  • সকালে হাঁটা
  • বিকালে ছবি দেখা
  • বন্ধুবান্ধব, পরিবার, স্ত্রী বা স্বামী, সন্তানদের সাথে কিছু সময় কাটানো
  • কর্মক্ষেত্রে একটানা বসে না থেকে কিছু সময় পরপর উঠে হাঁটা, কফি পান, নেট ব্রাউজিং বা পত্রিকা, ম্যাগাজিন এসব পড়া ভাল, এতে চাপ কমে

শেষ কথা হল, নীরব থেকে নিজের ভেতরে আগ্নেয়গিরির মত চাপ জমিয়ে রাখা উচিৎ নয় কারণ এটি কখনো কখনো বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। যোগাযোগ বাড়ানো, নিজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও সৎ হওয়া উচিৎ। মনে রাখতে হবে, চাপ বেড়ে গেলে কাজের উৎপাদনশীলতা কমে যাবে অপ্রত্যাশিতভাবে। তাই নিজেকে সবসময় সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, সুখী ও কর্মক্ষম রাখার চেষ্টা করা উচিৎ।

 

Permanent link to this article: http://bangla.sitestree.com/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%9a%e0%a6%be%e0%a6%aa-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a3-%e0%a6%93-%e0%a6%ac%e0%a7%8d/

Leave a Reply